অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরব বিএনপি। এর আগে দলটির একাধিক নেতা ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের কথা বললেও, এবার সেই দাবি বেশ জোরালোভাবে জানিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
নির্বাচন নিয়ে “টালবাহানা” চলছে উল্লেখ করে “ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে, ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে” বলে মন্তব্য করেছেন তিনি।
বুধবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলটির তারুণ্যের সমাবেশে তারেক রহমান এসব কথা বলেন।
বিএনপির এই অবস্থান নিয়ে অবশ্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে রাজনৈতিক দলগুলো।
কোনো কোনো দল বলছে, নয়মাস পেরিয়ে গেলেও অন্তর্বর্তী সরকার দৃশ্যমান কোনো সংস্কার দেখাতে পারেনি। বরং দেশের মধ্যে বেড়েছে বিভাজন ও বিশৃঙ্খলা। ফলে বিএনপির দ্রুত নির্বাচনের দাবিকে যৌক্তিক বলছে তারা।
আবার নির্বাচনের আগে বিচার ও সংস্কারের ওপর জোর দিচ্ছে এনসিপিসহ ইসলামপন্থি কিছু দল। যার কারণে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির শক্ত অবস্থানকে “সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগের কৌশল” হিসেবেও দেখছেন কেউ কেউ।
তবে ডিসেম্বর না হলেও ২০২৬ সালের শুরুর দিকেই নির্বাচন আয়োজনের কথা বলছে বেশিরভাগ দল।
‘সরকারকে চাপে ফেলার কৌশল’
নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে বিএনপির চাপের মুখেই গত বছরের ডিসেম্বরে জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া এক ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস ২০২৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা ঘোষণা করেন।
কিছুদিন আগে তার কথিত পদত্যাগ ভাবনার বিষয়ে আলাপ শুরু হলে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল অধ্যাপক ইউনূসের সাথে দেখা করেন।
সেসময়ও প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম আবারও জানান যে, জুন মাসই হবে এই সরকারের “কাট অফ টাইম”।
তবে নির্বাচনের এই সময়সীমা নিয়ে কখনোই সন্তুষ্ট ছিল না বিএনপি। সবশেষ গতকাল বুধবার দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আবারও দলটির জোরালো অবস্থান জানান দেন।
এনিয়ে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি বলছে, যেকোনো গণতান্ত্রিক শক্তি বা দল নির্বাচনের দাবি করতে পারে। তবে নির্বাচনের আগে সংস্কারের রোডম্যাপ এবং বিচারকে দৃশ্যমান করা গুরুত্বপূর্ণ।
“সংস্কার ফেলে রেখে শুধু নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হতে চাওয়াটা বাংলাদেশের রাজনীতি শুধু না, জুলাই অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবায়নের যে আকাঙ্ক্ষা মানুষের মধ্যে, সেটার জন্যে একটা ক্রাইসিস তৈরি করতে পারে”, বলছিলেন দলটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন।
তার মতে, জুলাই সনদের মধ্যে দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মৌলিক সংস্কারের বিষয়ে ঐকমত্য হলে এবং তা বাস্তবায়নের পথ পরিষ্কার করে নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হলে সংকট কাটানো সম্ভব।
নির্বাচনের আগে সংস্কারের কথা বলছে অন্য ইসলামপন্থি দলগুলোও।
ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচনের যে কথা বিএনপি বলেছে, তার সমালোচনা করে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও মুখপাত্র গাজী আতাউর রহমান বিবিসি বাংলাকে বলেন, “ওনারাই যদি নির্বাচন ঘোষণা করে দেন, তাহলে বাকি কাজটাও ওনারা করুক”।
তিনি বলছেন, অন্তর্বর্তী সরকার তাদের অনেক দায়িত্ব গুছিয়ে করতে না পারলেও অন্তত উদ্যোগ নিয়েছেন।
আর বড় একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির উচিৎ ছিল সরকারকে সহযোগিতা করা। উল্টো “রাস্তায় সমাবেশ করে আল্টিমেটাম দেওয়াটা আসলে সরকারকে চাপে ফেলার কৌশল”, যা ইসলামী আন্দোলন “খুব ভালোভাবে দেখছে না” বলে মন্তব্য করেন গাজী আতাউর রহমান।
এছাড়াও বিএনপি যদি নিজেদের অবস্থানে অনড় থাকে, তবে দলটির “সহযোগীরাও তাদের ভাষায় কথা বলবে”, যেটা দেশের জন্য ভালো হবে না বলেও মনে করেন মি. রহমান।
তবে সরকার ঘোষিত সময়ে নির্বাচন না করলে ইসলামী আন্দোলনও শক্ত অবস্থানে যাবে বলে জানান দলটির মুখপাত্র।
অন্যদিকে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে অর্থাৎ “অন্তত ফেব্রুয়ারি, মার্চ নাগাদ” নির্বাচন হওয়া উচিৎ বলে মনে করছেন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মামুনুল হক।
তিনি বলছেন, বিএনপি যে সময়ে নির্বাচন চাইছে আর প্রধান উপদেষ্টা যে সময়সীমা দিয়েছেন তার মধ্যে খুব একটা ফারাক নেই। সেক্ষেত্রে “প্রধান উপদেষ্টা সুনির্দিষ্ট একটি মাসের ঘোষণা দিতে পারেন”, বলেন তিনি।
এছাড়াও নির্বাচনের সঙ্গে যদি বিএনপি বিচার ও সংস্কারকেও তার দাবির মধ্যে গুরুত্বের সঙ্গে যুক্ত করে তবে তারা অন্য দলগুলোর সমর্থন পাবে বলেও মনে করেন মি. হক।
তবে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির অবস্থানের বিষয়ে কিছু বলতে রাজি নয় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী।
দলটির সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এবং কেন্দ্রীয় মিডিয়া ও প্রচার বিভাগের প্রধান এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বিবিসি বাংলাকে বলেন, “একেক দল তার তার মতো, স্ব স্ব অবস্থান থেকে তার যেটা ভালো মনে হয় বলবে”।
ডিসেম্বর থেকে জুনের যে সময়সীমার কথা সরকার বলছে, তারমধ্যে রোজার আগে ফেব্রুয়ারিতে বা রোজার পরে এপ্রিলে সুবিধামতো সময়ে নির্বাচনের চাইছে দলটি।
আরও পড়ুনঃ বিবিসি বাংলা থেকে…